প্রকাশকের কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইসলামের ইতিহাস জুড়ে প্রতি শতকেই কালজয়ী আধ্যাত্মিক নেতা ও আরেফ বা ওলিগণের আগমন ঘটেছে, যাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় সংস্পর্শে সে যুগের জ্ঞানপিপাসুগণ আলোকিত হয়েছেন। বিগত চৌদ্দশত বছর ধরে হাজারো বিভেদ ও বিভ্রান্তির ভীড়ে মুসলিম উম্মাহর যখনই সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার উপক্রম হয়েছে, তখন এই আলোর মশালধারী আলেমে দ্বীনগণই সত্যসন্ধানী উম্মাহকে পথ দেখিয়ে সত্যপথের উপর প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন এবং বিভ্রান্তির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। বিংশ শতাব্দীতেও এমন উচ্চ আধ্যাত্মিক মাক্কামসম্পন্ন আলেমে-দ্বীনগণ তাঁদের পদধূলি এই পৃথিবীর বুকে রেখে গেছেন। এই শতকের উচ্চ মর্যাদার আলেমদের একদম প্রথম সারির কয়েকজনের নাম নিলে যাঁর নাম অবধারিতভাবেই আসবে তিনি আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন কাযি তাবাতাবাঈ (র.)। বিংশ শতকের একদম গোড়ায় অর্থাৎ ১৯০৩ সালে ইরানের তাবরীজ শহরে জন্ম নেওয়া এই মহান ব্যক্তিত্ব শুধু যে প্রজ্ঞাবান আলেম ও শিক্ষক ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন জনগণের মাঝে ইসলামি বিপ্লবের চেতনার জাগরণের অন্যতম স্থপতি। তিনি একাধারে যেমন ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধনায় উৎকর্ষ অর্জনকারী সাধক, তেমনিভাবে ছিলেন সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে একজন অনুসরণীয় আদর্শ।
আমাদের সকলের কাছেই ইরানের কোম নগরী ইসলামি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ও আধ্যাত্মিক নগরী হিসেবে পরিচিত হলেও এর আরেকটা পরিচয়- এটি ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সূতিকাগার। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব সমগ্র ইরানের ধর্মপ্রাণ বিপ্লবী জনতার সম্মিলিত অবদান ও উৎসর্গের ফসল হলেও এই বিশাল জনতার হৃদয়ে বিপ্লব ও আত্মত্যাগের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন এই কোম নগরীর ধর্মীয় শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক নেতাগণ। বিপ্লবপূর্ব দশকগুলোতে তাঁদের নিবিড় আধ্যাত্মিক পরিচর্যাতেই ইরানের জনগণের মধ্যে বিপ্লবী নূরের অনির্বাণ স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিল। কোমের সবচেয়ে প্রথিতযশা আলেমগণের অন্যতম ছিলেন আল্লামা তাবাতাবাঈ। কোমের হাওযায় শিক্ষকতার সময়টায় ইসলামি বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম রুহুল্লাহ খোমেইনি (র.)- এর শুধু একজন সহকর্মীই নন, একজন ভ্রাতৃপ্রতিম সহযোগী হয়ে তিনি ইলমে দ্বীনের ছাত্র ও শিষ্যদেরকে আধ্যাত্মিক ও বিপ্লবী প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সন্দেহাতীতভাবেই, আজকের পুরো মুসলিম বিশ্ব ইরানের যে ইসলামি বিপ্লবের সুমিষ্ট ফল আস্বাদন করছে, সেই মহান বিপ্লবের বিনির্মাণে আল্লামা তাবাতাবাঈয়ের মতো সকল প্রথিতযশা আলেমের অবদানের জন্য মুক্তিকামী মুসলিমগণ তাঁদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। আল্লামা তাবাতাবাঈয়ের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এতটা সাফল্যমণ্ডিত হওয়ার পেছনে অন্যতম রহস্য ছিল তাঁর দ্যুতিময় শিক্ষাজীবন। নিজ শহর তাবরীজে প্রাথমিক শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে তিনি উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে গমন করেন ইরাকে অবস্থিত আরেক আধ্যাত্মিক নগরী ‘নাজাফ’ এ, যেখানে শায়িত আছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়াসি ও খলিফা এবং সেই সাথে সকল ওলির সর্দার আলি ইবনে আবি তালিব (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু)। প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে থেকেই ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা-নগরী হিসেবে গড়ে ওঠা নাজাফ-এ-আশরাফ শহরের বিখ্যাত ‘হাওযায়ে ইলমিয়া’তে অনেকগুলো বছর অধ্যয়ন করেন তিনি। সেখানে অধ্যয়নকালে তাঁর সুযোগ হয়েছিল বিগত শতাব্দীর শেষ্ঠতম ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষকগণের সান্নিধ্যে শিক্ষালাভের, যাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আয়াতুল্লাহ আলি কাযি (র.)। অর্থনৈতিক দৈন্য ও অন্যান্য হাজারো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী হওয়ায় উৎকর্ষ লাভ ও শিক্ষকগণের সুদৃষ্টি পেতে কোনোরূপ বেগ পেতে হয়নি তাঁর।
আল্লামা তাবতাবাঈয়ের জীবনালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়েই আছে তাঁর আধ্যাত্মিকতা তথা ইরফানি জীবন। আল্লামার আধ্যাত্মিক শিক্ষার গুরু ছিলেন কিংবদন্তি ইরফান সাধক ও শিক্ষক আয়াতুল্লাহ আলি কাযি, যাঁর শিক্ষাদানের হাত এমনই পরশপাথর ছিল যে, তাঁর জ্ঞানগৃহ থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল আয়াতুল্লাহ বেহজাত, আয়াতুল্লাহ কাশ্মীরি ও আয়াতুল্লাহ খুইয়ীর মতো আরও অনেক জগদ্বিখ্যাত আলেম ও সাধকের। এমন একজন শিক্ষকের যোগ্য শিষ্য হিসেবে আল্লামা তাবাতাবাঈ নিজের পরবর্তী কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আখলাক বা নৈতিকতা এবং পূর্ণ ইসলামি আদর্শিক জীবন যাপনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের যাঁরাই উত্তম আখলাক ও ইরফানি ধারায় প্রশিক্ষিত হয়ে একটি আলোকিত জীবনের অধিকারী হতে চেয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্যই আল্লামা তাবাতাবাঈ একজন অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ বা মডেল হয়ে আছেন।
আল্লামা তাবতাবাঈ ইসলামের খেদমতে ও ইসলামি জ্ঞানের বিকাশে অসামান্য সব অবদান রেখে গেছেন। তাঁর অনন্য কীর্তি ও লেখনীগুলো শুধু আজ অবধি নয়, বরং আরও বহু শতক ধরেই ইসলাম-গবেষকদের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় গবেষণা ও পঠন উপকরণ হয়ে থাকবে। তাঁর অসংখ্য কীর্তির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘তাফসির আল- মিযান’। সাতাশ খণ্ডের এই তাফসির গ্রন্থটি এর অতি উচ্চমান ও সমৃদ্ধ ভাষার লেখনীর জন্য ইসলামের সকল মাযহাব ও মাকতাবের কাছেই গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসিত হয়েছে। এই কীর্তিমান পুরুষ যে শুধু তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ লেখনীর মাধ্যমেই নিজ মহান কর্মের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা নয়, হাওযার শিক্ষকতা জীবনে পাঠদানের সময় তিনি সুনিপুণ পরিচর্যায় নিজ ছাত্রদেরকেও গড়ে তুলেছিলেন তাঁর জ্ঞানের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে। তাঁর হাতে লালিত গুণী ও মেধাবী ছাত্রদের অনেকেই পরবর্তীকালে একেকজন কীর্তিমান ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
আল্লামার এমন ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহহারি, মূসা আল সাদর, আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন তেহরানি, আয়াতুল্লাহ হাসানযাদে আমোলি, আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানি প্রমুখ।
একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে আল্লামা তাবাতাবাঈ তাঁর প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ছড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরে। আখলাক ও বিনয়ী মাধুর্যপূর্ণ আচরণের এক অনন্য উচ্চতায় অবস্থানের কারণে সমাজের অভিজাত শ্রেণি থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ পর্যন্ত সকলের কাছেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ। এর নজির আমরা দেখতে পাই তাঁর জীবনের বহু ঘটনায়। নানা মতের ও নানা আদর্শের মানুষের সাথে সব ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে অত্যন্ত সুস্থিত ও গঠনমূলক আলোচনা তিনি করতে পারতেন এবং একজন মনোযোগী শ্রোতা হয়ে সকলের মতামতকে মন দিয়ে শুনতেন। মাযহাবে আহলে বাইত তথা শিয়া মাযহাবের পাশাপাশি আহলে সুন্নাত সহ অন্যান্য বিশ্বাসের মানুষ, এমনকি ভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথেও তাঁর আলোচনা বৈঠকগুলো হতো অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও সমৃদ্ধ। সব ধরনের একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিহার করে তিনি অত্যন্ত নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের সাথে আলোচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এই সর্বজন-গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিপূর্ণ আলোচনা কৌশলের কারণে তাঁর সুযোগ হয়েছিল মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট থেকে শুরু করে পশ্চিমা পুঁজিবাদী কিংবা স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের সাথেও মত বিনিময় করার। তাঁর যুক্তিবিদ্যার দক্ষতা ও বক্তব্যের ধৈর্যশীল উপস্থাপনা সকলের কাছেই প্রশংসিত হয়েছিল, যার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় পরবর্তীকালে এমন অনেক অবিশ্বাসী কিংবা মার্ক্সবাদীর আল্লামার হাত ধরে ইসলামের ছায়াতলে চলে আসার মতো ঘটনায়। ইসলামি দর্শনের সাথে সাধারণ ও পাশ্চাত্য দর্শনের সমন্বয় সাধন এবং এর যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপন তাঁর লেখা গ্রন্থগুলোতেও পাওয়া যায়, যা আজ অবধি অনেক দর্শনের ছাত্র ও গবেষকের কাছে আদর্শ উপকরণ। ইরানে ও ইরানের বাইরে, এমনকি পাশ্চাত্যের অনেক ছিলেন। তেহরানি প্রমুখ।
প্রজ্ঞা ও ও বিনয়ী সমাজের ও সকলের দির আমরা আদর্শের গঠনমূলক শ্রোতা হয়ে বাইত তথা সের মানুষ, গুলো হতো এক পরিহার মতাদর্শের ভীত দৃষ্টিভঙ্গি এল মার্ক্সবাদী অবিশ্বাসীদের ও বক্তব্যের য়েছিল, যার এক অবিশ্বাসী চলে আসার চাত্য দর্শনের গ্রন্থগুলোতেও অষকের কাছে সত্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতেও আল্লামার অনেক লেখনীর অন্তর্ভুক্তি বেশ লক্ষণীয়।
আল্লামা তাবাতাবাঈর মতো একজন নক্ষত্রতুল্য মহান ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থ লিখলে তা অতিকায় আকার ধারণ করার দাবি রাখে। কিন্তু আল্লামার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবিগুলোকে পাঠকের চোখে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ও ছোট কলেবরে তুলে ধরার প্রয়াসে লেখক আহমাদ লুকমানি আল্লামার নিকটজনদের স্মৃতিচারণমূলক বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে সংকলিত করেছেন, যারই প্রকাশিত রূপ হলো ‘শাশ্বত প্রতিভাস’ গ্রন্থটি। এখানে আল্লামার শিক্ষা ও কর্মজীবন, তাঁর পারিবারিক ও আধ্যাত্মিক জীবন এবং তাঁর সমাজ সংস্কার ও বিপ্লবী আদর্শের বিনির্মাণের গল্পগুলো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, তাঁর সহকর্মী, ছাত্র ও অন্য শুভানুধ্যায়ীদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে। পাঠকের জ্ঞান-তৃষ্ণা নিবারণে ও আল্লামা তাবাতাবাঈয়ের আলোকিত জীবন সম্পর্কে আরও বেশি জানার আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা চিন্তা করে এই বইটির বাংলায় অনূদিত সংস্করণটির ভেতর আরও সংযোজিত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে এর বরেণ্য অধ্যাপক ও গবেষক হামিদ আলগারের লেখা ‘আল্লামা মুহাম্মাদ হুসাইন তাবাতাবাঈ দার্শনিক, মুফাসসির ও অধ্যাত্মবাদী’ শিরোনামের লেখনীটি- যা তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে ‘শাশ্বত প্রতিভাস’ আমাদেরকে শুধু আল্লামা তাবাতাবাঈয়ের জীবনের ঘটনাগুলো জানায় না, বরং তাঁর চিন্তা- চেতনার শাশ্বত আলোকে অনুসন্ধানের পথ দেখায়। তিনি যে আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞানের উৎস হিসেবে মুসলিম বিশ্বে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তারই প্রতিফলন এই গ্রন্থে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পাঠকরা এই বইয়ের মাধ্যমে আল্লামা তাবাতাবাঈয়ের জীবন ও তাঁর দর্শনের বহুমাত্রিক দিকগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবেন এবং তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।
সম্মানিত ও বিচক্ষণ পাঠকদের নিকট অনুরোধ, যেন তাঁরা বইটির কাজ যাঁরা আঞ্জাম দিয়েছেন তাঁদের সাথে জড়িত সকল মরহুম এবং দুনিয়ার বুকে যেসকল মৃতের জন্য দোয়া করার মতো কেউ নেই, যাঁদেরকে মানুষ ভুলে গিয়েছে, তাঁদের জন্য অন্তত একবার হলেও সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাস এবং দরুদ শরিফ পাঠ করে তাঁদের রুহের উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেবেন।
সম্ভাব্য সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু ভুলভ্রান্তি থেকে যেতে পারে। আশা করি আগামীতে সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের সহযোগিতায় সেই ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা হবে।
Reviews
There are no reviews yet.