বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের, যার আশীর্বাদ ও সাহায্য ছাড়া কোন কিছু করা সম্ভব নয়। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর উপর, যিনি এই ধরণী ও মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ এবং দরুদ ও সালাম তাঁর পবিত্র বংশধরগণের উপর। আর অভিশাপ বর্ষিত হোক তাঁদের শত্রুদের উপর। দীর্ঘদিনের বাসনা ছিল যে, আমিরুল মুমিনীন আলী (আ)-এর জন্ম থেকে শাহাদত পর্যন্ত তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক ও ফাজায়েলের হাদিসগুলোর সংকলন বাংলা ভাষী মানুষকে উপহার দেওয়া। কিন্তু সেই ধরণের পরিপূর্ণ কোন বই আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু একটা কথা আছে “যে যা ধায় সে তা পায়।” গুরারুল হিকাম বইটি অনুবাদ করার পর যখন আমি নাহজ আল ফাসাহাহ বইটির অনুবাদের শেষের দিকে সেই সময় Al-islam. Org-এ One Thousand virtues of Amir Al-Mu’mimi Ali Ibn Abu Talib বইটি আমার দৃষ্টিতে আসে বইটি কিছুটা পড়ার পরে আমি এতটাই আনন্দিত হয় এবং প্রশান্তি পাই যেন একজন তৃষ্ণাতৃ মানুষ তপ্ত মরুভূমিতে সুশিতল খেজুর বাগানের মাঝে ঠান্ডা জলাধিপা পাওয়ার পরে যেমন হয়ে থাকে ঠিক তেমন। আরও মজার বিষয় হলো যে সৈয়দ ফিরোজ কিবলা যিনি একজন আলেম ও নিরহঙ্কার সাধাসিধে মিষ্টি ভাষী মানুষ তিনি বইটির উর্দু অনুবাদ “মওলা আলী (আ) কি শান মে একহাজার হাদিস” বইটির pdf আমার whatsaap-এ পাঠিয়ে দেন, এ যেন না চাইতেই স্বর্গীয় বারিধারা। তারপর আল্লাহর উপর ভরসা ও যুগের ইমাম (আ ফ শ)-এর নেক নজরকে পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করে আমি অনুবাদের কাজ শুরু করি। কিন্তু কে আলী (আ)? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে আমাদেরকে মহান আল্লাহর দিকনির্দেশনা, হযরত নবী করিম (সা) তাঁর অমিয় বাণীর মাধ্যমে তাঁকে যেভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে ও তা উপলব্ধি করতে হবে। এছাড়া আমাদেরকে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে গভীর ভাবে অনুসন্ধান করতে হবে, তবে মানুষের পক্ষে তার জ্ঞানের শিখরে পৌঁছানো অসম্ভব হলে তাঁকে বোঝার জন্য মানুষের হৃদয়কে প্রসারিত করা উচিত এবং হযরত রাসুলুল্লাহ (সা) ও মহান ইমামগণ (আ)-এর আত্মিক সঙ্গী হতে হবে। এছাড়া ইমাম আলী (আ)-কে অন্য কোনো উপায়ে জানার চেষ্টা করা আলোর সন্ধানে অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করার মতো। আমিরুল মুমিনীন আলী (আ)-এর প্রভাময় উদ্ভাসকে বোঝতে হলে অজ্ঞতার গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং কেউ যদি জ্ঞানের আশানুরূপ উচ্চতায় আরোহণ করতে সক্ষম নাও হয় তবে অন্ততপক্ষে তাকে পক্ষপাতশূণ্য হতে হবে, যাতে সে সূর্যের অসাধারণ কম্রম-প্রতিভা দেখতে পায়। হযরত আলী (আ) এর পরিপূর্ণ মহিমা ও একই ভাবে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা জন্য এই ধরণী অপারগ। আমিরুল মুমিনীন আলী (আ)-এর পূর্ণ মর্যাদা ও উচ্চ সম্মান উপস্থাপন করা তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী নিজেকে গুটিয়ে নিবে, মরুভূমিগুলো বিলুপ্ত হবে যখন মানুষ বাকশক্তি ও নড়াচড়ার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহ যে দিন তাঁর চড়ান্ত রায় প্রদান করবেন। আমরা আমিরুল মুমিনীন আলী (আ) সম্পর্কে কি জানি? আল্লাহ জিব্রাইল (আ) এর মাধ্যমে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় রাসুল (সা) এর প্রতি ওহী নাযিল করে ইমাম আলী (আ) এর দীপ্তিশীল চেহারা উপস্থাপন করেছেন। আর, রাসুলুল্লাহ (সা) ইমাম আলী (আ)-এর উজ্জ্বল মুখ থেকে যতটা পর্দা উত্তোলন করেছেন ততটা। কিন্তু, তারপরও আমরা আলী (আ) সম্পর্কে কতটা জানি? মিরাজের রাত্রে, খন্দকের যুদ্ধে, উহুদের যুদ্ধে, খায়বারের যুদ্ধে এবং লাইলাত আল-মাবিত সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা) ইমাম আলী (আ)-এর নিরন্তর পরম কৃতিত্বের বর্ণনা যতখানি দিয়েছেন ততখানি। আমিরুল মুমিনীন আলী (আ)-এর চোখ-ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য আমাদের সামনে মেঘমুক্ত দিনের সূর্যের মতো আলোকিত। ইমাম আলী (আ) হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর মাধ্যমে গাদিরে খুমে রাসুলুল্লাহ (সা)-এর বিদায় হজ্জের শেষে ইমাম ও খলিফা হিসাবে ঘোষিত হয়েছিলেন। সেই দিন, আল্লাহ অনবস্থিতচিত্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সন্দেহের দূরতম সম্ভাবনাও দূর করেছিলেন; আর অজুহাতের সামান্য কোন সুযোগ ছিল না। ইমাম আলী (আ) সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর উপর ইমান আনেন এবং তাঁর নবুওয়াতকে সত্যায়ন করেন। ইমাম আলী (আ) তাঁর ঈমান ও তাকওয়ায়; প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতায়, পারদর্শিতা এবং ন্যায়পরায়ণতায় ছিলেন অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়। ইমাম আলী (আ) ছিলেন ধর্মোপসনাকারীদের মধ্যে অগ্রগণ্য এবং প্রতিটি আন্দোলন ও যুদ্ধে ছিলেন নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি ছিলেন যথাযথ ভাবে সুবিচারক ও সৎ মানুষ। এই বইটিতে সেগুলোকে পাঠকের কাছে তুলে ধরার আমার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র তাঁর সদগুণ ও সুকৃতি আমার মতো অধমের পক্ষে বর্ণনা করা অসম্ভব, তবে যেটুকু সম্ভব হয়েছে তা আমিরুল মুমিনীন আলী (আ)-এর শুভদৃষ্টি ও আমার পিতার রুহানী দোয়ার বরকতের উসিলার সুফল। একটি ভাষা থেকে আরেকটি ভাষাতে অনুবাদের কাজটি প্রকৃতপক্ষে একটি জটিল বিষয়। সেই সাথে সাহিত্যের অতি সূক্ষ্ম তারতম্য, বাক্যাংশ, বাগধারার ব্যবহার এগুলো তো আছেই। আমি যতদূর জানি যারা হাদিস শাস্ত্রের সাথে পরিচিত তারা একমত যে, অনুবাদের আসল বিষয়টি হলো মূলভাব বা সারমর্ম প্রকাশ করা। আর সেই জন্য আমি শব্দের চেয়ে মূলভাব, সারমর্ম ও মূলনীতির অর্থপূর্ণ অনুবাদের দিকে বেশি নজর দিয়েছে এবং যতদূর পেরেছি শব্দগুচ্ছের হুবাহু আক্ষরিক অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। এরপরও অনিচ্ছাকৃত ভুল, জ্ঞানের স্বল্পতা এবং আমার অযোগ্যতার জন্য আমিই দায়ী। আর তার জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি গাফুরুর রহিম। আমি বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি যে, কোন পাঠক যদি তার আকিদাগত পার্থক্যের কারণে অপছন্দের কিছু পান তবে মাজহাবী গোন্ডির বাইরে এসে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করবেন, না হয় সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ হৃদয়ে আলী প্রেম শুধুমাত্র পিতার ভদ্রতায় নয়, মায়ের পবিত্রতার কারণে অর্জিত হয়।
‘আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ)-এর অন্যন্য গুণাবলীর হাদিস সমগ্র’ পুস্তকটি দুইশত ছয়টি শী’য়া ও সুন্নী উৎস ও কিতাব সমূহ থেকে সংকলিত করা হয়েছে যা বাংলা ভাষী পাঠক ও তাঁর ভক্ত এবং অনুসারীদের উপহার দিতে পেরে আমি আল্লাহর কাছে সত্যই কৃতজ্ঞ। একটি বিষয় লক্ষণীয়, কোন কোন যে ত্রুমিক নম্বরের হাদিসগুলোতে টীকা নম্বর নেই, সেই হাদিসগুলো উপরের ত্রুমিকের হাদিসের বিকল্প অনুবাদ অথবা উর্দু থেকে অনুবাদকৃত। যাতে হাদিসের ভাষাগত পরিবর্তন হলেও মূলভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি। আরেকটি বিষয় তা হলো ‘বিশ্বাসের বর্হিপ্রকাশ’ লেখাটি আমিরুল মুমিনীন (আ)-এর ফাজায়েল সংত্রুান্ত মূল ইংরেজি One Thousand virtues of Amir Al-Mu’mimi Ali Ibn Abu Talib বইয়ের অংশ নয় তা বাংলা অনুবাদকের নিজের রচিত।
পরিশেষে পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে প্রার্থনা জানাই তিনি যেন আমাদেরকে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ) -এর জিয়ারত ও শাফায়াত নসীব করেন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও আলে মুহাম্মাদ (সা)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে জীবন যাপন করার সৌভাগ্য দান করেন। আমিন, বে হাক্কে মুহাম্মাদ (সা) ওয়া আলে মুহাম্মাদ (স)।
হে সাহেব আল আমর (আ ফ শ), আপনার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক; আমি আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি, আর হে আল্লাহর রাসুল (সা)-এর সন্তান অনুগ্রহ করে আমাকে কখনোই পরিত্যাগ করবেন না।
আল্লাহুমা সল্লে আ’লা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর।
মোঃ তুরাব রসুল
রাজশাহী , বাংলাদেশ
তারিখ: ১৪ই নভেম্বর ২০২৪
Reviews
There are no reviews yet.