Title |
তাজকেরাতুল আউলিয়া |
Author | মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আত্তার |
Translator | সারফুদ্দিন আহমেদ , এ. জে. আরবেরি |
Publisher | অন্যধারা |
ISBN | 978-984-98759-7-0 |
Edition | 1st Published, 2024 |
Number of Pages | 400 |
তাজকেরাতুল আউলিয়া
Original price was: ৳ 800.00.৳ 640.00Current price is: ৳ 640.00.
অনুবাদকের ভূমিকা
সংস্কৃত ভাষায় গল্পকে বলা হয় ‘কথা’। ‘কথা’ দুই ভাগে বিভক্ত। একধরনের গল্প মানুষ, দৈত্যদানব প্রভৃতি নিয়ে। আরেক ধরনের গল্প পশুপাখি- সংক্রান্ত। দৈত্যদানব-সম্পর্কিত কল্পনাময় কাহিনিগুলোকে ইংরেজিতে বলে ‘টেলস’। অন্যদিকে বিভিন্ন স্তরের মানুষের ব্যবহার, কার্যকলাপ পশুপাখির ওপর আরোপ করে রচিত গল্পগুলোকে ইংরেজিতে বলে ‘ফেবলস’। ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী নীতি-উপদেশ দেওয়াই ফেবলসের লক্ষ্য। সংস্কৃত সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ফেবলস হলো বিষ্ণু শর্মার পঞ্চতন্ত্র। ‘তন্ত্র’ মানে গল্পসংগ্রহ। এতে পাঁচটি তন্ত্র বা পরিচ্ছেদ আছে বলে এর নাম ‘পঞ্চতন্ত্র’। ‘পঞ্চতন্ত্র’-এর মূল চরিত্র বিভিন্ন পশুপাখি। এরা মানুষের ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর প্রায় ৫০টি ভাষায় দুই শর বেশি সংস্করণে পঞ্চতন্ত্র প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চতন্ত্র-এর গল্পগুলোতে শুধু ন্যায়নীতি, ত্যাগ, সততা প্রভৃতি আদর্শ প্রচারই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, পশুপাখির রূপকে মানুষের মহত্ত্ব, শঠতা, হৃদয়হীনতা প্রভৃতি গুণাগুণ পরোক্ষভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
পারস্যের সুফি সাহিত্যের একটি বড় অংশ ফেবলসের চেহারায় এসেছে। সোহরাওয়ার্দী মাকতুল এটিকে জোরালো রূপ দিয়েছেন। ফরিদ উদ্দিন আত্তারের ‘মানতিক উতুতায়ির’ বা ‘পাখি সম্মেলন’ এই ধরনটির বড় উদাহরণ। প্রমিত ও বিশুদ্ধ ফারসিতে লেখা এই কাব্যে আত্তার একঝাঁক
পাখির অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে মানবাত্মার রূপক যাত্রাকে চিত্রায়িত করেছেন। কল্পিত এক পাখি সি-মোরগের সন্ধানে একঝাঁক পাখি নিয়ে এক দীর্ঘ যাত্রা শুরু করে। মূল চরিত্র একটি হুদহুদ পাখির নেতৃত্বে সেই যাত্রা চলতে থাকে। পুরো কাব্যগ্রন্থটি সাজানো হয়েছে পাখিদের সংলাপ দিয়ে।
মানতিক উতুতায়ির এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত না হলেও আত্তারের তাজকিরাতুল আউলিয়ার নাম শোনেননি এমন লোক পাওয়া কঠিন।
একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের বিশেষত মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশের ঘরে দুটি বই খুব বেশি দেখা যেত। পরিবারের কেউ পড়ুক বা না পড়ুক বই দুটিকে বইয়ের তাকে অনেকটা ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে রাখা হতো। বই দুটির একটি হলো মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু, আরেকটি ফরিদ উদ্দিন আত্তারের তাজকিরাতুল আউলিয়া। তাজকিরাতুল আউলিয়ায় সাধকদের যেসব ঘটনা বলা আছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যসূত্র নেই। এ কারণে এই কাহিনিগুলোকে ‘আধা ঐতিহাসিক’ বলা যেতে পারে। তবে ঘটনাগুলোর সত্যতা প্রামাণ্য দলিল থেকে যতই দূরবর্তী হোক, এর মূল যে বক্তব্য, সেটির অনুধাবনই আসল বিষয়।
‘তাজকিরাতুল আউলিয়া’ শিরোনামে আমাদের বইয়ের বাজারে ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করা বই পাওয়া যায়। সব প্রকাশনার বইয়েই লেখকের নাম ফরিদ উদ্দিন আত্তার। ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে বলে সেখানে দাবি করা আছে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এসব বইয়ে এমন সব ব্যক্তির জীবনীও সন্নিবেশিত আছে, যাঁদের জন্মস্থান সমকালে বাংলাদেশে। মনে হতে পারে দ্বাদশ শতকে ইরানের নিশাপুরে জন্ম নেওয়া আত্তার এই সময়ের ওলিদের কথা লিখে গেছেন। এসব বইয়ে কোথাও কোনো তথ্যসূত্র নেই। বোঝাই যায়, সেগুলো মূল ‘তাজকিরাতুল আউলিয়া’ নয়। বাইরের নানা কাহিনি এর মধ্যে এসে জুড়ে বসেছে।
ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ আর্থার জন আরবেরি মূল ফারসি থেকে কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে ইংরেজিতে ‘মুসলিম সেইন্টস অ্যান্ড মিসটিকস: আ ট্রান্সলেশন অব এপিসোডস ফ্রম তাজকিরাতুল আউলিয়া’ শিরোনামে অনুবাদ করেছেন। সেটি থেকে আমি বাংলায় তরজমা করেছি।
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। আরবেরি এমন অনেক আরবি শব্দবন্ধকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, যেগুলোর সরাসরি বাংলা লিখলে কিছুই বোঝা যাবে না। যেমন তিনি লিখেছেন, ‘স্টেশন অব ইব্রাহিম (আ.)’। এর সোজা বাংলা হতে পারে ‘ইব্রাহিম (আ.)-এর মঞ্জিল’। কিন্তু এখানে আসলে ‘মাকামে ইব্রাহিম’কে বোঝানো হচ্ছে। ‘মাকাম’ মানে পা রাখার জায়গা বা দাঁড়ানোর স্থান। মক্কায় ইব্রাহিম (আ.)-এর পায়ের ছাপওয়ালা যে পাথর রয়েছে, সেটিই হচ্ছে ‘মাকামে ইব্রাহিম’।
আবার যেমন আরবেরি লিখেছেন, ‘গ্রেট নেইমস অব গড’। মূল আরবি পরিভাষা যাঁর জানা নেই, তিনি সোজা বাংলায় বলবেন, ‘আল্লাহর মহান নামসমূহ’। কিন্তু ইসলামি পরিভাষায় এটিকে বলে ‘ইসমে আজম’। ‘ইসমে আজম’ সম্পর্কে যিনি জানেন, তিনি ‘গ্রেট নেইমস অব গড’ কথাটির মর্মার্থ ধরতে পারবেন। আবার কোথাও তিনি হয়তো লিখেছেন, ‘হি কাট অফ হিজ গার্ডল’। সোজা বাংলায় এর অর্থ ‘সে তার কোমরবন্ধনী খুলে ফেলল’। কিন্তু যে প্রেক্ষাপটে ‘গার্ডল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে বাংলা ‘কোমরবন্ধনী’ লিখলে হচ্ছে না। ইসলামি খেলাফতে অমুসলিমদের একধরনের কোমরবন্ধনী বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হতো। সেটিকে বলা হতো ‘জুনার’। কেউ যখন বলত ‘আমি জুনার খুলে ফেললাম’, তখন বুঝতে হবে তিনি বলছেন, ‘আমি মুসলমান হয়ে গেলাম।’ কারণ, একমাত্র খেলাফতে তখন শুধু অমুসলিমরাই ‘জুনার’ পরতেন।
এ ধরনের অসংখ্য পরিভাষা ইংরেজিতে এসেছে। সেগুলোর মর্মোদ্ধার করতে বহু সময় দিতে হয়েছে। তবে এটি অনুবাদ করতে যাওয়ার সুবাদে সুফিবাদ ও ফারসি সাহিত্য সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা আমার হয়েছে। অগ্রজ কবি সাজ্জাদ শরিফের কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রী সুরাইয়া পারভীনকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সারফুদ্দিন আহমেদ
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Reviews
There are no reviews yet.