হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা ফার্সী ভাষায় গভীর ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁহার মাতৃভাষা ছিল ফার্সী। তিনি ফার্সীতে যে সব কবিতা রচনা করেন সেগুলি এতই সুললিত যা মানুষের হৃদয়স্পর্শ করে গভীর ভাবে। “দিওয়ানে ওয়াইসী” নামে ফার্সীতে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এই গ্রন্থে ১৭৯ টি গজল ও ২৩টি কার্সিদা ছাপা আছে। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা (রহঃ) পরলোক গমন করেন। জীবিত থাকা কালীন তাঁর পক্ষে এই গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয় নি। মৃত্যুর পূর্বে তিনি কন্যা জহুরা খাতুনকে এই গ্রন্থ অর্পন করেন। জহুরা খাতুনের পুত্র মৌলভী সাইয়েদ মোহাম্মদ মীর হাসান (সাহাপুর, মুর্শিদাবাদ) তাঁহার মায়ের নিকট থেকে পান্ডুলিপিটি সংগ্রহ করেন। তারপর ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার মৃত্যু ১২ বৎসর পর তিনি ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ শীর্ষক এই গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি ফার্সী ভাষায় প্রকাশিত হয় কলকাতা গওসিয়া প্রেস থেকে। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ২০৮।

বাঙ্গালী হয়েও তিনি ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ গ্রন্থটি ফার্সী ভাষায় লিখেন, ফার্সী রাজভাষা ছিল। আর সে সমস্ত সম্প্রদায়ের উচ্চশ্রেণীর মানুষ ফার্সী ভাষা ব্যবহার করত। দিওয়ানে ওয়াইসী কাব্য গ্রন্থ হাফেজ, সাদি ও অন্যান্য প্রখ্যাত ফার্সী কবিদের রচনা থেকে কম ছিল না।

পারস্যের কবিদের কবিতা ও হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) কবিতা পাশাপাশি রাখলে পার্থক্য বোঝা অসম্ভব। তাঁহার রচনা বিভিন্ন ভাষাভাষীদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য নানা ভাষায় অনুবাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু কেবলমাত্র একটি গজল অবিভক্ত ভারতের তথা বাংলার স্বনামখ্যাত পন্ডিত ডঃ শহিদুল্লাহ বাংলায় প্রথম অনুবাদ করেন। সেই গ্রন্থ পাঠ করে উপলব্ধি করা যায় হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা ফার্সীতে যে গজল রচনা করেছেন তা কত সমৃদ্ধ, তারপর অনেকেই অনুবাদের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই গজলের অন্তর্নিহিত অর্থ ‘এলেম মারেফৎ’ বা অলৌকিক শক্তি এতই অন্তর্ভেদী যে সকলের প্রয়াস সত্ত্বেও সেই মানের রচনা করা সম্ভব হয়নি।

হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার (রহঃ) পুত্র এডভোকেট শাহ্ সূফী সাইয়েদ জানে আলম দিওয়ানে ওয়াইসীর ১৭৯টি গজল ও ২৩টি কাসিদার বাংলায় অনুবাদ করেন। জীবিতকালে তিনি তা প্রকাশ করতে পারেন নি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র ব্যারিস্টার শাহ্ সূূফী সাইয়েদ শাহেদ আলম তাঁহার পিতা এ্যাডভোকেট সূফী সাইয়েদ জানে আলম বাংলায় অনুদিত ২৫টি গজল সমন্বিত একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, ১৯৮৬ সালে কলকাতায় হযরত ওয়াইসী পীরের শতবর্ষ তিরোধান দিবস উদ্যাপনের প্রাক্কালে।

সম্ভাবত ২১শে রমজান, ১৪২২ হিজরী, ২রা অগ্রহায়ণ ১৪০৮ বাংলা ৬ই ডিসেম্বর ২০০১ খ্রীষ্টাব্দে পূর্ন গ্রন্থটি প্রকাশ করেন হুজুরের প্রপৌত্র ব্যারিষ্টার হযরত শাহেদ আলম সাহেব।

এই দিওয়ানে ওয়াইসীর অধ্যায়নে গভীর জ্ঞান সঞ্চারিত হবে। ইরান সরকার দিওয়ানে ওয়াইসী গ্রন্থের গুরুত্ব বুঝে এর উপরে অনেক কাজ করছেন । বিশ্বের বহু মনীষী তাঁহার এই গ্রন্থের প্রশংসা করেছেন। তাদের মন্তব্যের কিছু নিদর্শন একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
একথা সর্বজনস্বীকৃত যে ভারতের মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’র কিছু কিছু গজল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. (স্নাতক) পাঠ্যসূচীতে এই গ্রন্থের কিছু বিষয় গৃহীত হয়েছে। নবাব সিদ্দিকী হোসেন ভূপালি তাঁহার ‘শ্যাম-এ-অঞ্জুমান’ গ্রন্থে এটির উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য বহু মনিষী এই কাব্যে গ্রন্থটি মূল্যায়ন করে অতি উচ্চ মার্গের বলে দাবী করেছেন। তবে এ কথা বলা বাহুল্য হবে না যে, বিশ্বের সকল ফার্সী কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি ছিলেন হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ওয়াইসী (রহঃ)। তাঁহার কাব্য সুষমা বিশ্বের সকল প্রান্তে পরিব্যাপ্ত হয়ে ভারত তথা বাংলা ও আসাম বিশেষভাবে গর্বিত হয়েছে।