অবতরণিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, মুসলমান জাতি হিসেবে আমরা আমাদের প্রাণের নবী, আমাদের হেদায়াতের কান্ডারী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর স্মরণ তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে করি না। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে এ স্মরণকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে বহু মতামতের অবতারণা করা হয়। যদিও আমরা শুধুমাত্র তাঁর জন্মদিনের উৎসব পালন করেই তাঁকে স্মরণ করে থাকি, তারপরো আজ এ নিয়ে নানা মত ও পথের মধ্যে বাঙালী মুসলমান হাবুডুবু খেয়ে চলছে। আবার সুন্নী মুসলমানদের মাঝে হুজুরে পাকের ইন্তেকালের কোন শোক অনুষ্ঠানের আয়োজনই করা হয় না। কেননা, আহলে সুন্নতের আলেমরা তাঁর ইন্তেকালকে রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখে হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। তবে এ মাসের কোন দিনে তিঁনি ইন্তেকাল করেছেন সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতভেদ আছে। তারপরো তাদের কাছ থেকে এ কথা সুপ্রসিদ্ধ যে, আল্লাহর হাবিব নাকি বার রবিউল আউয়ালেই ইন্তেকাল করেছেন। এ জন্যে তারা রাসূলের ইন্তেকাল নিয়ে কোন ওয়াজ মাহফিল করেন না এবং কোন ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতিও দেন না। আর এ কারণে রাসূলের জীবনের শেষ সময়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুসলমানদের কাছে আজ অবধি অজানাই থেকে গেছে। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস বলে যে, আল্লাহর রাসূলের(স.) ইন্তেকাল এগার হিজরী সনের ২৮শে সফর-এ সংঘটিত হয়েছিল। ইতিহাসের উৎসসমূহে যা লিপিবদ্ধ আছে তা হচ্ছে, হযরত(সা.) কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন এবং এরপর ইন্তেকাল করেছেন। অপরদিকে নবীজীর আহলে বাইতের ইমামদের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর নবী(সা.) বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। জ্বী, হ্যাঁ, ইতিহাস বলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম সফর মাস শেষ হবার দুই দিন পূর্বে ইহলোক ত্যাগ করেছেন এবং তিঁনি স্বাভাবিক মৃত্যুতে দুনিয়া ত্যাগ করেননি; বরং তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। এ কথাটি এমনভাবে মুসলমানদের কাছ থেকে লুকানো হয়েছে যে, কোথাও এ কথা বলতে গেলে তারা অবাক হয়ে যান। আর তাই আজ, সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ নবী ও রাসূল, রহমতের কান্ডারী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর শাহাদাত প্রসঙ্গটি এমন একটি বিষয়, যা মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি আশ্চর্য ও অবিশ্বাস্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
আমরা জানি না, কেন নবীজীর শাহাদাতের বিষয়টি গোপন করা হয়েছে। তবে এতটুকু বুঝা যায় যে, হুজুরে পাকের শাহাদাতের ঘটনা বর্ণনা ও ব্যক্ত হতে থাকলে তাঁর শাহাদাতের কারণ ও চক্রান্তকারীদের মুখোশ উম্মোচন হওয়ার পাশাপাশি শাহাদাতের কাছাকাছি দিনগুলোতে যে সব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল তারও উম্মোচন হয়ে যেতো এবং তা জানা থাকলে মুসলম ানরা অনেক সত্য বিষয় সমন্ধে অবগত হতে পারতো। আর এর মাধ্যমে তাদের জন্যে সত্য ইসলামের খাটি অনুসারী হবার সুযোগ সুষ্টি হতো। তাই, বাস্তবে এবং আমাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সকলকে জানিয়ে দেয়া দরকার যে, আল্লাহর রাসূল(সা.) স্বভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেননি; বরং তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। “আল্লাহর রাসূল(সা.)-এর শাহাদাত বরণ”-এর উপর ঈমান রাখার গুরুত্ব আমাদের কাছে তখনি পরিস্কার হবে, যখন উপলব্ধি করা সম্ভব হবে যে, শাহাদাতের মূল কারণ কী ছিল। আর তখনি একজন জিজ্ঞাসু ও কৌতুহলী মুসলমান তাঁর(সা.) যামানার ইসলামের শত্রæদের ব্যাপারে সচেতনভাবে অধ্যয়নে মনযোগী হবেন। এভাবে নবীজীর শাহাদাতের আগে ও পরের ঘটনাবলী জেনে অনেক ষড়যন্ত্রের জাল তার সামনে ধরা পড়ে যাবে। ফলে সে সঠিক ও সত্যের সন্ধান পেয়ে সত্যিকার রাসূল প্রেমিক হয়ে জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
আমরা এ গ্রন্থে মহান নবীর শাহাদাতের বিষয়টি নির্ভুল ও সহি হাদিস এবং ইতিহাসের আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি, যেন মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর হাবীবের মহব্বতে তাঁর ইন্তেকালের বিষয়টি জেনে শোক পালন এবং শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনাবলী জানার মাধ্যমে আল্লাহর রাসূলের খাটি উম্মত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে আখেরাতে নাজাতের ব্যবস্থা করতে পারেন।
Reviews
There are no reviews yet.