শিফাতুশ শিয়া
[ শিয়াদের গুণাবলী ]
গ্রন্থকার: শেইখ সাদুক (রহ.)
অনুবাদ: শেখ জাহিদ আলী
সম্পাদনা: আসিফ আলী ইমামী
ভূমিকা
সব প্রশংসা ঐ মহিমান্বিত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী, যিনি অঁাধারের বুক চিরে আলো সৃষ্টি করেছেন, যিনি হৃদয়কে জ্ঞান, আত্মাকে ঈমান এবং জীবনকে উদ্দেশ্য দান করেছেন।
তিনিই পরম দয়ালু, যিনি আমাদেরকে কুরআনের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন –এক এমন গ্রন্থ, যা হেদায়েতের দীপ্তমান প্রদীপ, করুণার বারিধারা এবং সত্য—অসত্যের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড। তিনিই আমাদেরকে চৌদ্দ মাসুম (আ.)—এর অনুসরণের সৌভাগ্য দান করেছেন, যাঁরা কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা, ইলহামের মশাল, আর ন্যায় ও তাকওয়ার অবিচল মডেল।
আমি আমার অনুবাদের কলমকে সাজিয়েছি কৃতজ্ঞতার মালা দিয়ে, যার প্রতিটি শব্দের মাঝে আছে রব্বুল আলামিনের শুকরিয়া এবং চৌদ্দ মাসুম (আ.)—এর প্রতি দরুদ ও সালাম। তাঁদের জীবন ও শিক্ষা আমাদের জন্য এমন এক আয়না, যার মাঝে প্রতিফলিত হয় সত্য, ধৈর্য, ইখলাস এবং ত্যাগের পরাকাষ্ঠা।
দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর পবিত্র আহলুল বায়েত (আ.)—এর উপর –যাঁরা সত্য, পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক উচ্চতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে কুরআনের আলোয় উদ্ভাসিত করো এবং আমাদের আমলকে মাসুমিন (আ.)—এর আদর্শ অনুযায়ী কবুলযোগ্য করে তোলো। –ইলাহী আমীন।
‘শিফাতুশ শিয়া’ হলো শিয়াদের ‘নৈতিক’ ও ‘আচরণগত’ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত হাদিসের একটি সংকলন, যা শেইখ সাদুক (মৃত্যু: ৩৮১ হিজরি/৯৯১—৯২ খ্রিস্টাব্দ) রচনা করেছেন। এই বইটি শিয়াদের মধ্যে কী ধরনের গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, সে সম্পর্কিত আলোচনায় নিবেদিত। পরবর্তীকালে শিয়া পণ্ডিত ও ফিকহবিদ (ফকিহ)গণ তাদের গবেষণায় এই বইটি পরামর্শ ও উদ্ধৃত করেছেন এবং পরবর্তী অনেক হাদিস সংকলনে এটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিবরণমূলক তথ্য:
লেখক: শেইখ সাদুক (রহ.)
মূল শিরোনাম: صِفاتُ الشّیعَة (Ṣifāt al-Shīʿa)
ভাষা: আরবি
বিষয়: হাদিস সংকলন
লেখক পরিচিতি:
প্রধান নিবন্ধ: শেইখ সাদুক (রহ.)
মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আল—হুসায়ন ইবনে মুসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল—কুম্মী, যিনি আল—শায়খ আল—সাদুক নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন, চতুর্থ হিজরি শতাব্দীর (দশম খ্রিস্টাব্দ) একজন অগ্রগণ্য শিয়া ইসলামিক পণ্ডিত।
জীবনবৃত্তান্ত:
— জন্ম: ৩০৫ হিজরির (৯১৭—১৮ খ্রিস্টাব্দ) পূর্বে ইরানের রেই শহরে
— ইন্তেকাল: ৩৮১ হিজরি (৯৯১—৯২ খ্রিস্টাব্দ)
— বিশেষ পরিচয়: তিনি কুম শহরের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস (হাদিস বিশারদ) ও ফকিহ (ইসলামিক আইনবিদ) ছিলেন এবং কুমের হাদিস চর্চার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত ছিলেন।
সাহিত্যকর্ম:
— রচনাসম্ভার: ৩০০—এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন, যার অনেকাংশই কালের প্রবাহে বিলুপ্ত হয়েছে।
— উল্লেখযোগ্য রচনা:
— “মান লা ইয়াহদুরুহু আল—ফকিহ” – শিয়া ইসলামের চারটি প্রামাণ্য হাদিস গ্রন্থের (সিহাহ আরবাআ) অন্যতম।
— “শিফাতুশ শিয়া” (এই গ্রন্থ) – শিয়াদের নৈতিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত হাদিস সংকলন।
মূল্যায়ন:
তাঁর রচনাসমূহ শিয়া ইসলামী সাহিত্যে মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং পরবর্তী শতাব্দীব্যাপী পণ্ডিতদের জন্য প্রামাণিক রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বিশ্বাসযোগ্যতা:
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই গ্রন্থটি শিয়া পণ্ডিত ও ফকিহদের দ্বারা উদ্ধৃত ও পরামর্শকৃত হয়ে আসছে। পরবর্তীকালের বহু হাদিস সংকলনে এটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন:
— “আদ—দুম‘আত আস—সাকিবা” –মুহাম্মাদ বাকির ইবনে আব্দুল করিম আদ—দিহদাশতী আল—নাজাফী
— ‘বিহারুল আনোয়ার” –আল্লামা মাজলিসি
— “ওয়াসাইল আশ—শিয়া” –শায়খ হুর আমিলি
— “মুসতাদরাক আল—ওয়াসাইল” –মুহাদ্দিস আল—নুরি
‘মুহাদ্দিস আন—নুরি’ এই বইটির প্রতি এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, তিনি নিজ হাতে এর একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন, যা বর্তমানেও সংরক্ষিত আছে।
বইটির বিষয়বস্তু:
এই বইটিতে মোট ৭১টি হাদিস সংকলিত হয়েছে, যা নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে:
— শিয়াদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি
— ইমাম (আ.)—গণের নির্দেশাবলি মেনে চলা
— তাকিয়্যাহ্ (প্রয়োজনে ধর্মীয় গোপনীয়তা রক্ষা)
— পরহেযগার ব্যক্তিদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য
— মু’মিন (বিশ্বাসী) ব্যক্তির লক্ষণ
— মানুষের সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি
— ধর্মীয় নীতিতে অবিচল থাকা
— আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব
— আল্লাহর জন্য শত্রুতা
— নৈতিক সদগুণাবলি
পাণ্ডুলিপিসমূহ:
এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
— তেহরানের ডক্টর নও’ পারাস্ত লাইব্রেরিতে একটি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে।
— নাজাফের উর্দুবাদী লাইব্রেরিতে আরেকটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
— সামারার তাহেরানী লাইব্রেরিতে এই বইটির একটি পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান।
— তেহরানের মির্জা আলী বেহযাদী লাইব্রেরিতে (আল—মুহাদ্দিস আন—নূরীর নাতির সংগ্রহশালা) সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি আল—মুহাদ্দিস আন—নূরী কর্তৃক ১২৭৯ হিজরিতে (১৮৬২—৬৩ খ্রিস্টাব্দ) স্বহস্তে লিখিত।
এই পাণ্ডুলিপিগুলো গ্রন্থটির ঐতিহাসিক ও গবেষণামূলক মূল্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
প্রকাশনার ইতিহাস:
বাংলাদেশের শিয়া মুসলিম সমাজে ধর্মীয় বইপত্রের সীমিত প্রাপ্তি এবং বিশুদ্ধ শিক্ষার স্বল্পতা অনেক দিন ধরেই অনুভূত হয়ে আসছিল। সেই অভাব পূরণের ক্ষুদ্র কিন্তু আন্তরিক প্রয়াস হিসেবে ‘মক্তব—এ—সাকালাইন’—এর উদ্দে্যাগে এবং ‘আলে রাসূল পাবলিকেশন্স’—এর সহায়তায় আমরা এই প্রথম বাংলাভাষায় প্রকাশ করতে যাচ্ছি এক অমূল্য হাদীসগ্রন্থ– “সিফাতুশ শিয়া”।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও আলেমে দ্বীন, শেইখ সাদুক (রহ.) কর্তৃক সংকলিত এই গ্রন্থটি মূলত এমন এক ঐশী দলিলভাণ্ডার, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং পবিত্র ইমাম (আ.)—দের মুখনিঃসৃত হাদীসসমূহের মাধ্যমে প্রকৃত শিয়ার বৈশিষ্ট্য ও পরিচয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই –শিয়ারা কারা, কেমন তাঁদের চিন্তা ও বিশ্বাস, কেমন তাঁদের আমল ও চারিত্রিক গুণাবলি –সবই ‘নবুয়ত’ ও ‘ইমামত’—এর আলোকে বিশ্লেষিত।
আমাদের এই প্রচেষ্টা তাদের জন্য, যারা নিজেকে পবিত্র আহলুল বায়তের অনুসারী মনে করেন এবং দ্বীনের শুদ্ধ রূপ জানতে আগ্রহী। “শিফাতুশ শিয়া” কেবল একটি হাদীসগ্রন্থ নয়; বরং এটি আত্মগঠন, নৈতিক উন্নয়ন এবং শুদ্ধ আকীদার এক বাস্তব দিকনির্দেশনা।
আমরা এই মহৎ কাজে সাহায্য করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি এবং আশা করি, এই গ্রন্থটি বাংলাভাষী পাঠকদের হৃদয়ে ঈমান, ভালোবাসা ও আনুগত্যের দীপ্তি জ্বালিয়ে তুলবে পবিত্র আহলুল বায়ত (আ.)—এর প্রতি। একই সঙ্গে সকল পাঠক, গবেষক এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করছি –এই পবিত্র আমানতের মূল্য বুঝে তা নিজ জীবনে ধারণ করুন এবং অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিন।
সুহৃদ পাঠক, আপনাদের গবেষণার সুবিধার্থে এই গ্রন্থটির আরবি এবং ইংরেজি সংস্করণের Web Llink ও QR code উল্লেখ করা হলো
Ṣifāt al-Shīʿa
jafrilibrary.com/books/125709
For English PDF
shiapdfresources.wordpress.com/wp-content/uploads/2015/03/sifat-ush-shia-qualities-of-shia.pdf
Reviews
There are no reviews yet.